শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ১১:০৫ অপরাহ্ন
প্রধান সংবাদ :

বি এম কলেজের শিক্ষক অকৃতকার্য করিয়ে দিলেন শিক্ষার্থী কে।

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিতঃ শুক্রবার, ২১ অক্টোবর, ২০২২

স্বেচ্ছাচারিতার প্রতিবাদ করায় মাস্টার্সের এক শিক্ষার্থীকে ফেল করিয়ে দিয়েছেন সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ড. মাহমুদুল ইসলাম। তার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থী জিম্মি করা, পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার হুমকি এবং প্র্যাকটিকেল পরীক্ষায় অকৃতকার্য করে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন একাধিক শিক্ষার্থী।

যদিও কলেজ প্রশাসন বলছে, অভিযোগের বিষয়টি সমাধান হয়ে গেছে। আর অভিযুক্ত শিক্ষক দাবি করেছেন, ভুলবশত নম্বর পাঠানো না হওয়ায় অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

জানা গেছে, মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের মাস্টার্স শেষ পর্বের শিক্ষার্থী গোলাব রাব্বি অনিকের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া আদায় নিয়ে দ্বিমত হলে বিভাগীয় প্রধানের রোষানলে পড়েন। এরপর বিভাগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে তাকে অংশগ্রহণ করতে বাধা দেন তিনি। এমনকি মাস্টার্সের ভাইভা ভালো হলেও তাকে ইচ্ছা করেই অকৃতকার্য করেন।

অনিক দাবি করেন, ২০১৭ সালে শিক্ষা সফর নিয়ে স্যারের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের দূরত্বের সৃষ্টি হয়। তিনি একনায়কতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিলে আমরা তা প্রত্যাখ্যান করি। এরপর থেকেই স্যার আমার ভবিষ্যৎ নষ্ট করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে আসছিল। তিনি ২০১৮ সালের অনার্স চতুর্থ বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষার ইনকোর্স, ব্যবহারিক ও মৌখিক পরীক্ষার প্রাপ্ত মার্কস কমিয়ে দেন। তার এ কাজের বিরোধিতা করেন বিভাগের অন্যান্য শিক্ষকরা। এতে বিভাগীয় প্রধান স্যার একজন শিক্ষককে শোকজ করেন। তিনি আমাকে কলেজে মাস্টার্সে ভর্তি হতে বাধা দেন। শেষে আমার পরিবার, কলেজের শিক্ষকরা মিলে তাকে অনুরোধ করে আমার ভর্তি নিশ্চিত করান। এমনকি আমাদের বিভাগের ইফতার মাহফিল থেকে আমাকে বের করে দেন। সর্বশেষ মাস্টার্সের মৌখিক পরীক্ষায় আমাকে ইচ্ছা করেই ফেল করান।

আরেক শিক্ষার্থী ইমদাদুল হক তুষার বলেন, বিভাগীয় প্রধান স্যার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। তার কথার দ্বিমত করলেই পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। ভবিষ্যৎ নষ্ট করে দেওয়ার কথা বলেন। আমার সঙ্গেও তিনি এমন হুমকি-ধমকি দিয়েছেন। বিভাগের আয়োজন থেকে বের করে দিয়েছেন।

মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ফয়সাল আহমেদ বলেন, একজন বিভাগীয় প্রধানের কাছ থেকে আমরা কখনই এমন আশা করি না। তার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক বন্ধুর মতো হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। তার কাছ থেকে আমরা কোনো সহায়তা পাইনি। আমার বন্ধু অনিককে ইচ্ছাকৃতভাবে ফেল করানোর যে ঘটনা ঘটেছে সেটি উচিত হয়নি। এর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত বলে আমি মনে করি।

রেদোয়ানুর রহমান রিয়াদ বলেন, বিভাগীয় প্রধান স্যার ইফতার মাহফিলের অনুষ্ঠানে আমাদের বের করে দেন এবং ভবিষ্যৎ নষ্ট করে দেওয়ার হুমকি দেন। তারই ধারাবাহিকতায় তিনি গোলাম রাব্বি অনিককে ইচ্ছা করেই মাস্টার্সে ফেল করিয়েছেন। আমাদের দাবি উদ্দেশ্যমূলকভাবে আমার বন্ধুকে যেভাবে হয়রানি করা হয়েছে সেভাবে যেন অন্য কোনো শিক্ষার্থীর সাথে না ঘটে। শিক্ষার্থীরা বিভাগীয় প্রধানের অপসারণের দাবি জানান।

অনিকের সঙ্গে বিভাগীয় প্রধানের করা অন্যায় আচরণের বিচার চেয়ে কলেজ প্রশাসনে লিখিত আবেদন করেছেন শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি আন্দোলন কর্মসূচিও পালন করেন তারা।

বিষয়টি স্বীকার করেছে কলেজ প্রশাসন।বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ড. মাহমুদুল ইসলাম বলেছেন, পরীক্ষার ফলাফল যখন হয়েছে তখন আমি ঢাকায় ছিলাম। ফলাফলে সে (অনিক) অকৃতকার্য এসেছে। আমি ঢাকা থেকে এসে দেখলাম, তাকে ফেল করানো হয়নি। ভুলবশত প্রাপ্ত নম্বর পাঠানো হয়েছে। পরে সংশোধনের জন্য নম্বর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। তার সঙ্গে হিংসামূলক কোনো আচরণ করা হয়নি।

বিএম কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. গোলাম কিবরিয়া বলেন, ইচ্ছা করে ওই শিক্ষার্থীকে ফেল করানো হয়নি। ঘটনাটি ‘প্রিন্টিং মিসটেক’। আমরা সংশোধনের জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রে পাঠিয়েছি। আশা করছি দ্রুতই সংশোধন হয়ে চলে আসবে।

প্রসঙ্গত, এর আগে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। যেখানে দেখা যায়- মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ড. মাহমুদুল ইসলাম তার শিক্ষার্থী গোলাম রাব্বি অনিককে ইফতারের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বাধা দিচ্ছেন। এ সময়ে তিনি ওই শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ নষ্ট করে দেওয়ার হুমকি দেন। এরপরই মাস্টার্সের মৌখিক পরীক্ষায় তাকে অকৃতকার্য করানোর অভিযোগ ওঠে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আর নিউজ
© All rights reserved © 2019 southbengalnews
themesba-lates1749691102