রাজধানীর গুলশানে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের সময় বহুতল ভবন থেকে নিচে পড়ে ফারজানা আক্তার (১৯) নামে এক তরুণীর মৃত্যু হয়েছে। একই ঘটনায় আহত হয়েছেন আরেক তরুণী (২২)। তার অবস্থা সংকটাপন্ন। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বুধবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। ওই ভবনে অবৈধ স্পা সেন্টার ছিল।
ডিএনসিসি সূত্র জানিয়েছে, আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, ফুটপাত-রাস্তা দখল করে বসানো দোকানপাটসহ নানা অবৈধ কার্যক্রমের বিরুদ্ধে ডিএনসিসি প্রতিনিয়ত ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালান।
বুধবার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল হাসানের নেতৃত্বে গুলশান-২ এর ৪৭ নম্বর রোড ও আশপাশের এলাকায় সকাল থেকেই অভিযান চলছিল। তারা অবৈধ হকার উচ্ছেদ, ফুটপাত-রাস্তায় রাখা নির্মাণসামগ্রী অপসারণ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স চেক করছিলেন।
দুপুরে একই সড়কের ২৫ নম্বর ভবনে ভ্রাম্যমাণ আদালতে অংশ নেওয়া সদস্যরা নক করলে কেউ গেট খুলছিল না। কিছু সময় পরই শোনা যায় দুজন তরুণী ভবন থেকে লাফ দিয়ে নিচে পড়েছেন। তখন দ্রুত পুলিশ তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।
পুলিশ জানিয়েছে, ভ্রাম্যমাণ আদালতের সঙ্গে এপিবিএনের সদস্যরা ছিলেন। ভবনটিতে অবৈধ স্পা সেন্টার রয়েছে। ভবনের নিচে ভ্রাম্যমাণ আদালত দেখে ফারজানাসহ দুই তরুণী নিচে পড়েন। পুলিশ তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক বিকাল ৪টার দিকে ফারজানাকে মৃত ঘোষণা করেন। আরেক তরুণীর অবস্থাও গুরুতর।
গুলশান থানার এসআই আলমগীর হোসেন বলেন, ফারজানাসহ দুই তরুণী গুলশান-২ এর ৪৭ নম্বর সড়কে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়েছিলেন। তাদের মাথা ও হাতে জখম রয়েছে। তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক জানান, একজন মারা গেছেন। এক তরুণীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গুলশান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শেখ শাহানুর রহমান বলেন, যে ভবন থেকে পড়ে ওই তরুণী মারা গেছেন সেখানে অল দ্য বেস্ট নামে একটি স্পা সেন্টার রয়েছে। স্পা সেন্টারটি ভবনের ফ্ল্যাট ডি-৪-এ অবস্থিত। তবে ঢাকা উত্তর সিটির ম্যাজিস্ট্রেট ওই ভবনের কোন ফ্ল্যাটে অভিযানে গিয়েছিলেন তা আমরা জানি না। এছাড়া নিহত তরুণী স্পা সেন্টারে কাজ করতেন কিনা সেটিও জানি না। এ বিষয়ে ম্যাজিস্ট্রেট ভালো বলতে পারবেন।
জানা গেছে, ডিএনসিসির ভ্রাম্যমাণ আদালত গুলশানের আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছেন। তারই অংশ হিসেবে তারা আজ ৪৭ নম্বর সড়কের ভবনটিতে গিয়েছিলেন।
ফারজানার স্বামী জাহিদ হাসান পেশায় মুদিদোকানি। তিনি বলেন, পুলিশের কাছ থেকে খবর পেয়ে বিকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে জানতে পারি আমার স্ত্রী মারা গেছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের সময় তার স্ত্রী ভবন থেকে লাফ দিয়ে পড়ে মারা গেছে বলে তিনি পুলিশের কাছ থেকে শুনেছেন।
জাহিদ হাসান আরও বলেন, কয়েক দিন আগে ফারজানার বড়বোন আফসানা গ্রামের বাড়ি থেকে ঢাকায় আসেন। ভাড়া বাসায় সবাই মিলে খিলক্ষেতে থাকতাম। আমার স্ত্রী ও তার বোন চাকরি খুঁজতেছিল। আজ তারা জানায়, গুলশানে একটি বিউটি পার্লারে কাজ করতে যাচ্ছে। তবে কোন বিউটি পার্লারে কাজ করতে গিয়েছিল সে বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।
নিহতের বড়বোন আফসানার সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, সে শুধু আমাকে ফোন করে বলেছিল তাকে পুলিশ ধরেছে। ফারজানার কথা জিজ্ঞাসা করলে সে কিছু বলতে পারেনি। শুনেছি এখন সে থানায় আছে। পুলিশও আমাকে থানায় নিয়ে এসেছে।