শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:৪৮ অপরাহ্ন
প্রধান সংবাদ :

এসি বিকল, শেবাচিমের সিসিইউতে রোগীরা অতিষ্ঠ।

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিতঃ সোমবার, ২০ মার্চ, ২০২৩

গরম না আসতেই বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিৎসা নিতে আসা হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। কারণ, এ বিভাগের এয়ারক‌ন্ডিশন মে‌শিন (এসি) বিকল।

জায়গা সংকটে বাড়তি রোগীর চাপ ও দীর্ঘদিন ধরে এসি অকেজো পড়ে থাকায় দম বন্ধ হওয়ার মতো অবস্থা শেবাচিমের সিসিইউ বিভাগ। হাসপাতালের পোস্ট সিসিইউ ইউনিটে রোগী সংখ্যা কম থাকলেও অবস্থা একই।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, গণপূর্তকে একা‌ধিকবার চি‌ঠি দেওয়া হ‌য়ে‌ছে এসি ঠিক করতে। কিন্তু, সেখান থেকে দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

হাসপাতালের প্রশাসনিক শাখা সূ‌ত্রে জানা গে‌ছে, শেবাচিমের মূল ভব‌নের সঙ্গে নির্মিত ভবনের দ্বিতীয় তলায় হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য করা সিসিইউ ইউনিটে ছোট-বড় মিলিয়ে ১০‌টি এসি বিকল।

পোস্ট সি‌সিইউ বিভাগে ছোট-বড় আটটি এসি রয়েছে। এ ছাড়া ইকো ও ইটি‌টি ক‌ক্ষে র‌য়ে‌ছে দুটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র। অথচ, এ বিশটি মেশিনই বিকল। রোগীদের জন্য ব্যবহৃত এসি নষ্ট হলেও সচল রয়েছে বিভা‌গের রে‌জিস্ট্রা‌রের রু‌মের একটি এসি। এ ছাড়া একা‌ডে‌মিক ক‌ক্ষের এক‌টি ও তিন চি‌কিৎস‌কের কক্ষের ৩টি এসিও দারুণ কাজ করছে।

শেবাচিমের সি‌সিইউতে চি‌কিৎসা নেওয়া রোগীদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মে‌ডি‌সিন বা অন‌্য কিছু ওয়া‌র্ডে যেমন রোগী‌র ভিড় থাকে, এ বিভাগেও তেমন ভিড় থাকে। রোগীর পাশাপাশি স্বজনরাও হাসপাতালে থাকছেন। বদ্ধ রুমে বাইরের বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই। তাই এসি না চলায় সিসিইউ কক্ষে দম বন্ধ হওয়ার মতো পরিস্থিতি থাকে।

হার্ট অ্যাটাক করায় হাবিবুর রহমান নামে এক যুবক শেবাচিমের সিসিইউ বিভাগে তার বাবাকে ভর্তি করিয়েছেন। তিনি বলেন, এ বিভাগে গর‌মে টেকা যায় না। সব এসি বন্ধ। সিটের তুলনায় রোগী বেশি, মেঝেতেও তারা জায়গা নিচ্ছেন। মাঝে মাঝে দম বন্ধ হয়ে যায়। রোগীদের এমন সমস্যা থাকলেও চিকিৎসকরা কিন্তু ভালোই আছেন। তাদের এসি চলে। যদি এখন তাদের এসি নষ্ট হয়, প্রশাসনের টনক দ্রুত নড়বে।

সিসিইউর দায়িত্বরত স্টাফরা বলছেন, হাসপাতালের মূল ভবনের ভেতরে বিভাগটি এমনভাবে নির্মিত, যেখানে দক্ষিণ ও পশ্চিম দিক থেকে বাতাস চলাচল করতে পারে না। ভবন নির্মাণ কৌশলের কারণেও ভেতরটা গরম হয়ে থাকে। ভেতরে এসি না চালিয়ে রাখলে পরিস্থিতি খারাপ হয়ে যায়।

স্টাফ নার্সদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকা‌রি হি‌সেবে সি‌সিইউ ও পি‌সি‌সিইউ বিভাগে চারটি করে মোট আটটি শয্যা বরাদ্দ রয়েছে। ত‌বে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীর চাপ সামলাতে দুটি ওয়ার্ডে ৪৩‌টি শয্যা দিয়েছে। কিন্তু বর্তমান অবস্থা ভিন্ন। বিভাগে রোগী ভর্তি থাকে দ্বিগু‌ণেরও বে‌শি। যে কারণে মেঝেতে থেকেও চিকিৎসা নিতে হয় রোগীদের। আগে এসি সচল ছিল। এখন বিকল হয়ে পড়ায় রোগী‌দের দু‌র্ভোগ হয় ব্যাপক। তারা নিজেরাও কাজ করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন।

রোগীদের বিভাগে এসি চলে না, কিন্তু চিকিৎসকদের কক্ষে এ যন্ত্র সচল কেন জানতে চাইলে হাসপাতা‌লের সহকা‌রী প‌রিচালক ম‌নিরুজ্জামান শা‌হিন বলেন, সঠিকভাবে ব্যবহার করায় চিকিৎসকদের কক্ষের এসিগুলো দীর্ঘদিন ধরে সচল রয়েছে। রোগী‌দের এসি অচল হওয়ায় গণপূর্ত বিভাগে একাধিক চিঠি দিয়েছি। তারা কার্যত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

তি‌নি ব‌লেন, হাসপাতাল ভবন ষাটের দশকে নির্মিত। ভব‌নের প‌রি‌ধিও বা‌ড়ে‌নি। এর ম‌ধ্যেই আমরা রোগী‌দের সেবা দি‌চ্ছি। জায়গা সংক‌টের কার‌ণে আমরা মন্ত্রণাল‌য়ে প্রস্তাব পা‌ঠি‌য়ে‌ছি, যাতে বর্তমান ভবন ভে‌ঙে ১৭ থে‌কে ২০ তলার এক‌টি ভবন নির্মা‌ণ করা হয়। প্রকল্প‌টি পাশ হ‌লে দ‌ক্ষিণাঞ্চ‌লে রোগী‌দের কো‌নো ভোগা‌ন্তি থাক‌বে না।

শেবাচিমের এসি মেরামত সম্পর্কিত বিষয়ে ব‌রিশাল গণপূর্ত বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী কাজী আবু জিহাদ ব‌লেন, ২০২২ সালেও নতুন তিন‌টি এসি দেওয়া হয়েছে হাসপাতালে। সি‌সিইউ বিভা‌গে নতুন এসি দেওয়ার সু‌যোগ থাক‌লে দেওয়া হ‌বে। নয়ত এখনকার এসি মেরামতের সু‌যোগ থা‌কলে সেটি করা হবে। আর য‌দি কো‌নো‌টি সম্ভব না হয় তাহ‌লে মন্ত্রণাল‌য়ে বরা‌দ্দ চাইবো।

এ সময় তিনি দাবি করেন, হাসপাতাল থেকে এসি নষ্ট সম্পর্কিত কোনো চিঠি তারা পাননি। তবে, খোঁজ নিয়ে চিঠি পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আর নিউজ
© All rights reserved © 2019 southbengalnews
themesba-lates1749691102