শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫, ০১:২২ পূর্বাহ্ন
প্রধান সংবাদ :

বড় ভাই ছাত্রলীগে, জাবি হলে থাকেন অছাত্র ছোট ভাই।

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিতঃ রবিবার, ২৬ মার্চ, ২০২৩

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আ ফ ম কামালউদ্দিন হলের ৪০৯ নম্বর কক্ষ। এখানে প্রতিষ্ঠানের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য সিট পাওয়া বড় ভাগ্যের ব্যাপার।

সহজে একক সিট তো মেলে না, তদবির-তহবির করেও অনেক সময় সাধারণ শিক্ষার্থীরা পান না। কিন্তু ভাগ্যবান তারাই, যাদের ভাই-ব্রাদার বা খুব কাছের কেউ জাবি ছাত্রলীগের নেতৃত্বস্থানীয় পদে আছেন।

তেমনি এক ভাগ্যবানের নাম রাকিবুল ইসলাম এজাজ। থাকেন আ ফ ম কামালউদ্দিন হলের ৪০৯ নম্বর কক্ষে।

ফ্রিতে থাকলেও ভোগ করেন সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা। কিন্তু তিনি জাবির ছাত্র নন। তার সবচেয়ে বড় পরিচয়, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের নেতা তাওহীদুল ইসলাম জিহাদের ছোট ভাই। যে কারণে এজাজকে নিয়ে টু-শব্দ করতে পারেন না সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

জিহাদ জাবির অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের ৪৬ ব্যাচের (সেশন ২০১৬-২০১৭) মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। শাখা ছাত্রলীগের উপ-কর্মসূচি ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

ভুক্তভোগীদের দাবি, নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করেই নিজের ছোট ভাইকে মাসের পর মাস আ ফ ম কামালউদ্দিন হলের ৪০৯ নম্বর কক্ষে রাখছেন জিহাদ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হলের পলিটিক্যাল ব্লকের ২৩৫ নম্বর কক্ষে জিহাদের বসবাস। নিজের কাছে কয়েকদিন ছোট ভাই এজাজকে রাখেন। পরে দুই সিট বিশিষ্ট ৪০৯ নম্বরে সিটে রাখার বন্দোবস্ত করেন। প্রায় ৩ মাস ধরে এ কক্ষে বসবাস করেন রাকিবুল ইসলাম এজাজ।

ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, এজাজ ২০২২ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবেন তাই ৪০৯ নম্বরে থেকেই পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

এজাজের মতো ভাগ্যবান নন হলের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ না হয়ে সে সুবিধা পাচ্ছেন, তা থেকে হাজারো মাইল দূরে নবীন শিক্ষার্থীরা। কারণ, আ ফ ম কামালউদ্দিন হলের নিচতলায় গণরুমে ৫১ ব্যাচের (প্রথম বর্ষ) শিক্ষার্থীরা গাদাগাদি করে থাকেন। ৭০ থেকে ৮০ জন একসঙ্গে এক ছাদের নিচে রাত কাটান। দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা (৮-১০ জন করে) থাকেন হলের দুই আসন বিশিষ্ট এক রুমে মেঝেতে। আর তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা দুই আসন বিশিষ্ট এক রুমে থাকেন ৪-৫ জন করে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আ ফ ম কামালউদ্দীন হলের এক আবাসিক শিক্ষার্থী এজাজের ব্যাপারে বলেন, আমি বেশ কয়েক মাস ধরে তাকে হলে দেখছি। প্রথমে ভাবতাম কারও অতিথি, বেড়াতে এসেছেন। কিন্তু মাস কয়েক পার হওয়ায় পরিচিত হই। জানতে পারি তিনি পলিটিক্যাল ব্লকের ছাত্রলীগ নেতা জিহাদের ছোট ভাই। এ কক্ষে কীভাবে থাকেন জানতে চাইলে তিনি জিহাদের সঙ্গে কথা বলতে বলেন।

অন্যান্য শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, এজাজ তার বড় ভাই জিহাদের প্রভাবে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পায়। একজন বহিরাগত হয়ে হলের রুমে তিনি যদি থাকার সুবিধা পান, তাহলে ছাত্ররা কষ্ট কেন করবে, কেন তারা গাদাগাদি করে থাকবে, কেন তাদের ওপর ছাত্রলীগের খড়্গ পড়ে থাকবে- এমন প্রশ্নও করেছেন তারা।

বিষয়টি নিয়ে জিহাদের দাবি, এজাজ তার কাছে এসেছিল ঘুরতে। তিনি বলেন, ও হলে থাকে না। আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজের পাশে বন্ধুদের সঙ্গে একটি মেসে থাকে। কিন্তু হলে বসবাসকার‌ী শিক্ষার্থীরা বলছেন, জিহাদ মিথ্যা তথ্য দিচ্ছেন। এজাজ হলেই থাকে, তা সবাই দেখেছেন। একসঙ্গে এক মানুষ মিথ্যা বলবে, তা হতে পারে না।

এ নিয়ে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটনের সঙ্গে কথা হলে, ছাত্রের সিটে অন্যজনের বিষয়টি তিনি দেখবেন বলে জানিয়েছেন।

আর আ ফ ম কামালউদ্দীন হলের প্রভোস্ট আ স ম ফিরোজ উল হাসানের দাবি, তিনি নাকি এজাজের বিষয়টি জানতেনই না। প্রভোস্ট বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। জানলাম, খোঁজ নিয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আর নিউজ
© All rights reserved © 2019 southbengalnews
themesba-lates1749691102