আজ ৮ ডিসেম্বর বরিশাল মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে বাধভাঙা স্রোতের মতো মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। বিজয়ের আনন্দের মধ্যেও সেদিন স্বজন হারানোর বেদনায় অনেকেরই অশ্রু ফেলে। এর আগে ৪ ডিসেম্বর যশোরের পতন হলে গৌরনদী বাদে পাকিস্তানি সৈন্যরা বরিশালে ওয়াপদায় এসে আশ্রয় গ্রহণ করে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রদীপ কুমার ঘোষ পুতুল বলেন ‘’ ৭ ই ডিসেম্বর গভীর রাতে হঠাৎ কারফিউ ঘোষণা করা হয়। গভীর রাতে ওয়াপদা থেকে সেনাবাহিনী , মিলিশিয়া , শান্তিকমিটির সদস্যরা কিউই জাহাজে উঠে ঢাকা রওনা হয়। অপর জাহাজ টি বরিশাল নদীবন্দর ত্যাগ করে ভোর ৪ টায়। এসব জাহাজের পথ দেখিয়ে নিয়ে যায় গানবোট । পাকিস্তানী আর্মি শহরে কারফিউ দিয়ে অতি সন্তর্পনে বরিশাল নদী বন্দর ত্যাগ করে।
কিন্ত ৮ ডিসেম্বর সকালে মুলাদির কদমতলা নদীতে লঞ্চ ও চাদপুরের মেঘনা মোহনায় কিউই জাহাজ, ভারতীয় বোমারু বিমান মিগ-২৯ এর বোমা হামলায় বিধ্বস্ত হলে সকল পাকিস্তানী সৈন্য ও শান্তি কমিটির সদস্যদের সলিল সমাধি ঘটে। এই জাহাজে কুখ্যাত শান্তি কমিটির সদস্য শাজাহান চৌধুরীররও একই পরিণতি ঘটে’।
’ সুলতান মাস্টার তার দলবল নিয়ে বরিশালের কাছেই নবগ্রামে আগেই পৌছে গিয়েছিলেন। পাকিস্তান আর্মির পলায়নের খবরে সুলতান মাস্টার তার বাহিনী নিয়ে মুক্ত বরিশালে প্রথমে প্রবেশ করে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে দেন। পরে লাকুটিয়াতে অবস্থানকারী রেজাই ছত্তার ফারুকের নেতৃত্বে শহরে প্রবেশ করেন আরেক দল মুক্তিযোদ্ধা। এর পর আবদুল মান্নান, গৌরনদীর নিজামউদ্দিন নগরীতে প্রবেশ করেন। কুদ্দুস মোল্লা জেলাখানার দায়িত্ব নিয়ে আটক মুক্তিযোদ্ধাদের মুক্তি দিয়ে দেন। মুক্তিযোদ্ধারা যখন দলে দলে নগরীতে প্রবেশ করেন তখন নগরীতে উপস্থিত সাধারণমানুষ তাদেরকে স্বাগত জানিয়ে জয়বাংলা ধ্বনি দিয়ে স্বাগত জানায়’ বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম জানান।
বরিশালে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আবুল বাশার জানান, বরিশাল পাকিস্তান হানাদার মুক্ত হলেও ওয়াপদা এলাকায় কিছু মিলিশিয়া , রাজাকার ছিল। এ ছাড়া দোয়ারিকা এলাকায় ক্যাপ্টেন কাহারের নেতৃত্বে পাকিস্তানী সৈন্যবাহিনীর একটি ইউনিট ও গৌরনদীতে পাকিস্তানী সৈন্যর আরেকটি ইউনিট অবস্থান করছিল। তারা মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে নয়, ভারতীয় বাহিনীর কাছে আত্নসমর্পন করতে চাইলেও মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পরে আত্নসমর্পন করতে বাধ্য করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধে নবম সেক্টরের সাব সেক্টর কামান্ডার মাহফুজ আলম বেগ জানান,’ আমরা ওয়াপদায় আসার পরে এখানকার রাজাকার মিলিশিয়াদের আত্নসমর্পন করতে বাধ্যকরি। পরে দোয়ারিকায় ক্যাপ্টেন কাহার আলোচনার মাধ্যমে আত্নসমর্পন করে। তাদের হাটিয়ে শহর থেকে ওয়াপদায় নেয়া হয়।আমরা ওয়াপদায় আসার পরে এখানে আটক বহু নারী পুরুষকে দেখতে পাই। অনেক নারীকেই সেদিন আমরা উদ্ধার করি। এখানে পাকিস্তানী আর্মিরা যে বিভৎস নির্যাতন চালিয়েছে-তা এক কথায় ভয়াবহ। ৮ ডিসেম্বর বরিশাল মুক্ত হলেও অনেকেরই স্বজন হারানোর বেদনায় চোখে আশ্রু ছিল’
তিনি জানান পাকিস্তানী আর্মি বরিশাল অঞ্চলে অর্ধশতাধিক বধ্যভূমিতে পঞ্চাশ হাজারের বেশী মানুষ হত্যা করে। অসংখ্য নারীকে নির্যাতন করে, বহু ঘরবাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দেয়।