শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৩৯ অপরাহ্ন
প্রধান সংবাদ :

ভালোবাসি তোমায়

সাহিত্য ও সাংস্কৃতি ডেস্ক
  • প্রকাশিতঃ সোমবার, ২২ আগস্ট, ২০২২

শুভ ও স্নেহা নবম শ্রেণীতে একই স্কুলে পড়ে। সেখান থেকেই তাদের পরিচয়। স্নেহাকে প্রথম দেখাতেই শুভ পছন্দ করত মন থেকে, কিন্তু বলা হয়ে উঠেনি। তার প্রেম এতটাই শক্ত ছিল যে, স্নেহা যে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যেত শুভর মনই বলে দিত এখন গেলে তাকে দেখতে পাবে। সে যে রঙের কাপড় পরত, শুভ তা বুঝতে পারত।

স্নেহা জানত শুভ তাকে অনেক পছন্দ করে। শুভর একবার জ্বর এলো, স্নেহা তাকে দেখতে দেখতে গিয়ে কপালে হাত দিয়ে বলছিল- ভালো হয়ে যাবে। সে বাসা থেকে গেল আর শুভর জ্বর ভালো হয়ে গেল। কোনো ডাক্তার বা ওষুধের প্রয়োজন হয়নি।

শুভ এসএসসি পরীক্ষা দিল। সব বিষয় ভালো হয়েছে। হিসাব বিজ্ঞান পরীক্ষার দিন স্নেহার সাথে রাস্তায় দেখা, সেদিন নিল শার্ট, কালো পেন্ট, কালো সানগ্লাস পরা। স্নেহা বলছে- শুভ তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে। পরীক্ষার কেন্দ্রে গিয়ে তার কথাই ভাবছে, চোখের সামনে ভেসে উঠছে, পরীক্ষার খাতায় শুধু তাই দেখছে। খাতায় আর লিখতে পারছে না। শুভ সে বিষয়ে পরীক্ষায় ফেল করে। অন্য সব বিষয়ে পাশ করে। পরের বছর আবার সেই বিষয় পরীক্ষা দিয়ে পাশ করে।

সব বন্ধুরা ও বান্ধবীরা ঘুরতে গেল পার্কে, সেখানে আমগাছ আছে তার একটা আম অনেক পছন্দ হয়েছে। বলে- এ আমটা যদি পাইতাম। এ কথা বলে হাঁটছে। এখানে পাড়তে দিবে না গার্ড আছে। শুভ গাছে উঠতে পারে না। দৌড়ে গেলো গার্ডের কাছে, অনুরোধ করে অনুমতি নিল। গাছে উঠে আম পাড়ে। এখন আর নামতে পারে না। সেদিন পরেছিল কালো গেঞ্জি, নীল জিন্স প্যান্ট। দিল লাফ গাছ থেকে, হাঁটু ছিলে গেল, রক্ত পড়ছে কিন্তু শুভর সে খেয়াল ছিল না। শুভ দৌড়ে তার কাছে আম নিয়ে গেল, সে তো অবাক আম পেয়ে। পাশ থেকে বন্ধুরা বলছে তোর পা দিয়ে রক্ত পড়ছে। তুই গাছে উঠতে গেলি কেন, কখনো গাছে উঠোছ নাই। তুইকি পাগল নাকি। তুই যার জন্য এত কিছু করিস, সে তো তোকে ভালোবাসে না।

সে আমাকে না ভালোবাসুক আমি তো তাকে ভালোবাসি। স্নেহা আম পেয়ে বান্ধবীদের নিয়ে খুশিতে চলে গেল। রাতে খুব স্নেহাকে দেখতে ইচ্ছে হলো। জীবনে কখনো অংকে জ্যামিতি দেওয়া হয়নি ও শেখাও হয়নি। সেই ছেলে হাতে কাগজ ও পেন্সিল নিয়ে ছবি একে ফেললো স্নেহার। সেই ছবি দেখে বন্ধুরা সবাই অবাক, অপরিচিত মানুষও সে ছবি দেখলে স্নেহাকে চিনতে পারবে। ছবিটি স্নেহা চাওয়ার পর শুভ বলে- ছাপ দিয়ে আরেকটা একে তাকে দিবে। যে ছবি করতে লেগেছে তিন মিনিট, সেই ছবি শত চেষ্টা করে চার দিনেও আর আগের মতো আঁকতে পারল না। হৃদয় থেকে আঁকা ছবি আর হচ্ছে না সেরকম। তাই প্রথমটাই দিয়ে দিল।

একদিন স্নেহা শুভর বাসায় গিয়ে বিয়ের দাওয়াত কার্ড দিলো। বাসা থেকে রাস্তায় স্নেহা যাওয়ার সময় শুভ বলল- স্নেহা আমি তোমায় অনেক ভালোবাসি স্নেহা। তুমি তা জানো, এ বিয়ে তুমি করো না। আমি মরে যাবো তোমাকে ছাড়া।

শুভ আমি জানি তুমি আমাকে অনেক ভালোবাস। তোমার কাজে চালচলনে বুঝেছি, তুমি বন্ধু দিয়ে বুঝিয়েছ। কিন্তু শুভ আমরা একসাথে পড়ালেখা করেছি, সমবয়সী তাই বিয়ে হবার না। আর তোমার কী আছে যে তোমাকে বিয়ে করব। না আছে টাকা, বাড়ি-গাড়ি কিছুই নেই তোমার। যার সাথে বিয়ে আমার তার সবকিছুই আছে। আমারও আছে। আমার সময় নষ্ট হচ্ছে চলি।

শুভর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল, নেশা করতে শুরু করল। এক মাস পর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। সপ্তাহখানেক হাসপাতালে ছিল। সবাই অনেক বুঝানোর পর নিজেকে একটু পরিবর্তন করল। পড়ালেখা শেষ করে চাকরিতে লেগে গেল। বেতনের টাকা জমিয়ে বিজনেস শুরু করল, দুটো কাজই চালিয়ে গেল। বাড়ি-গাড়ি-টাকা সবই নিজে করল। আজ আমার সবই আছে, শুধু স্নেহা তুমি নেই।

একদিন শুভ অফিসের কয়েক বন্ধুসহ রেস্তোরাঁয় খাচ্ছে, এমন সময় স্নেহা ও তার স্বামী সেখানে গেল। স্নেহা তাকে জিজ্ঞাসা করছে- কেমন আছো তুমি? শুভ উত্তর দেয়নি, না খেয়ে বিল দিয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে চলে গেল। আজ থেকে আবার নেশা করতে শুরু করল। অতিরিক্ত নেশা করার ফলে লিভারে সমস্যা ও ক্যান্সার হয়ে তিন মাস পরেই শুভ মারা গেল। একদিন শুভর বাসায় স্নেহা এলো। শুভর বাসার সবাই আগে থেকেই স্নেহাকে অনেক আদর করত। বাসায় এসে সবাইকে ভালো-মন্দ জিজ্ঞাসা করল। শুভর কথা জিজ্ঞাস করতেই মা কেঁদে উঠল। আমার শুভ বেঁচে নেই। কি হয়েছে? তোমাকে না পাওয়ায় অনেক নেশা করত। লিভার সমস্যা ও ক্যান্সারে মারা গেছে আজ দুই মাস হলো। শুভর মা অনেকগুলো কাগজ স্নেহার হাতে দিল। কী মা এগুলো? শুভ যত টাকা, বাড়ি-গাড়ি করছে সব তোমার নামে দিয়ে গেছে। সে বলে গেছে- একদিন তুমি ঠিকই এখানে আসবে, তখন তোমাকে দিতে। স্নেহা জোরে জোরে কাঁদতে থাকল।

শুভর ছোট ভাইকে নিয়ে তার কবরে গেল আর কেঁদে কেঁদে বলে- শুভ আমি অনেক ভুল করেছি, আমি সুখে নেই। বিয়ের রাত থেকেই আমার স্বামী মাতাল হয়ে প্রতি রাতে আমাকে মারধর করত আরও অনেক বকাঝকা দিত। ও আমাকে ডিভোর্স দিয়েছে। আমাকে সে ছেড়ে দিয়েছে। আমি পাপি শুভ। আমাকে তুমি ক্ষমা করো। তোমার ভালোবাসার মূল্য আমি দিতে পারিনি। তোমাকে বিয়ে করলে আজ অনেক সুখে ও ভালো থাকতাম। পৃথিবীতে টাকা, বাড়ি-গাড়ি, সম্পদই সবকিছু নয়- এসব জিনিসপত্র কখনো সুখ দিতে পারে না। আমি তোমার পরিবারের সাথেই থাকব, আমার কিছুই চাই না। শুভর কবরে একটি গোলাপ ফুল দিয়ে বলে- আমি তোমায় ভালোবাসি শুভ। অপেক্ষায় থাকব পরের জীবনে তোমার হয়ে থাকতে চাই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আর নিউজ
© All rights reserved © 2019 southbengalnews
themesba-lates1749691102