দেশের অমূল্য প্রত্নসম্পদ এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষা ও সংরক্ষণে প্রায় ৫৮ বছরের পুরোনো আইন রোহিত করে নতুন প্রত্নসম্পদ আইন প্রস্তুত করা হলেও তা আজও আলোর মুখ দেখেনি। বিদ্যমান আইনকে যুগোপযোগী করতে ২০১৫ সালে এ নতুন আইন তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে ২০১৬-২০১৯ সময়ে নানা প্রক্রিয়া শেষে আইনটির খসড়া তৈরি হয়।
এদিকে যুগোপযোগী আইন না থাকায় নানা প্রত্নতাত্তি¡ক ঐতিহ্য সংরক্ষণে বিঘ্ন ঘটেই চলেছে। দখল ও বেহাত হয়েছে অনেক প্রত্নতাত্তি¡ক স্থান ও নিদর্শন। ঐতিহাসিক অনেক অবকাঠামো ভেঙে দেওয়া হয়েছে নতুন রূপ। ব্রিটিশ আমলে প্রণীত আইনের ফাঁক গলে নয়ছয় হয়ে যাচ্ছে অনেক প্রত্নসম্পদ।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রতন চন্দ্র পণ্ডিত বলেন, আইনটি নিয়ে এখনো যাচাই-বাছাই চলছে। মন্ত্রিপরিষদ থেকে কিছু পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। আমরা সেগুলো ঠিক করে আবার মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। তবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের একটি সূত্র জানায়, খসড়া আইনটি মন্ত্রিপরিষদে পাঠানো হয়েছিল। সেখান থেকে সর্বশেষ দেওয়া পর্যবেক্ষণের মধ্যে কিছু বানান ভুল ছিল। কয়েকটি ধারা অপ্রাসঙ্গিক হিসাবে চিহ্নিত করে ঠিক করতে বলা হয়। সেগুলো ঠিকঠাক করে কয়েকদিন আগে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংসদ ও আইন শাখার যুগ্মসচিব সুব্রত ভৌমিক বলেন, আমরা বর্তমানে আইনটি নিয়ে কাজ করছি। এ আইনের খসড়ায় দেখা যায়, এতে প্রত্নসম্পদকে ‘অমূল্য’ আখ্যা দিয়ে এর ক্ষতিসাধন, ধ্বংস, ভাঙা, বিনষ্ট, পরিবর্তন করলে ১০ বছর কারাদণ্ড অথবা ১০ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। প্রত্নসম্পদ রক্ষায় প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের অধিযাচন (ফরমায়েশপত্র) সাপেক্ষে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা যাবে। এতে পুরাকীর্তির ব্যবসা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধের বিধান এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে পুরাকীর্তির অনুকৃতির ব্যবসার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রীয় প্রত্নসম্পদের পাচার রোধে সরকারের অনুমতি ছাড়া কোনো প্রত্নসম্পদ প্রদর্শনী ও গবেষণার স্বার্থে পরীক্ষার জন্য দেশের বাইরে পাঠানো যাবে না। এ বিধান অমান্যকারী প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত হলেও সর্বোচ্চ ৫ বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এছাড়া নতুন আইনে স্থাবর প্রত্নসম্পদের সর্বোচ্চ সুরক্ষিত এলাকা বা প্রপার্টি জোন ও বিশেষ সুরক্ষিত এলাকা সুনির্দিষ্ট থাকবে। বিশেষ সুরক্ষিত এলাকায় কোনো বহুতল ভবন নির্মাণ, ইটভাটা, কলকারখানা স্থাপন, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, রাস্তা নির্মাণ করা যাবে না। এছাড়া প্রত্নতত্ত¡ অধিদপ্তরের অনুমতি ব্যতীত কোনো খনন করা যাবে না।
আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, দেশে প্রাপ্ত ও জাদুঘরে সংরক্ষিত প্রত্নসম্পদ বা প্রত্ন বস্তুর বাজারমূল্য নির্ধারণ করা যাবে না। এগুলো অমূল্য সম্পদ হিসাবে পরিগণিত হবে। কিন্তু এতে শর্ত দিয়ে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট প্রত্নসম্পদ মালিকের ক্ষতি পূরণের ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ মূল্য নির্ধারণ করা যাবে। ব্যক্তিগত বা সাংগঠনিক পর্যায়ে কেউ প্রত্নসম্পদ বেচাকেনা বা সংগ্রহ করতে পারবেন না। তবে সরকারি মালিকানাধীন অথবা সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন বিভিন্ন জাদুঘর প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরকে অবহিত করে প্রত্নসম্পদ সংগ্রহ করতে পারবে। উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত অথবা অন্য কোনো বেআইনি নয়-এমন অন্য কোনো সূত্র থেকে প্রাপ্ত প্রত্নসম্পদ কোনো ব্যক্তি বা সংস্থার কাছে থাকলে সেসব সম্পদের প্রমাণাদি অধিদপ্তরকে দিতে হবে। সেগুলো সংগ্রহে রাখা যাবে কিন্তু হস্তান্তর করা যাবে না। কোনো অস্থাবর প্রত্নসম্পদ বা প্রত্নবস্তু বা প্রত্নসম্পদের অংশবিশেষ সরকারের অনুমতি ছাড়া বিদেশে প্রেরণ করা যাবে না। এর ব্যত্যয় শুল্ক আইনের আওতায় চোরাচালান হিসাবে গণ্য হবে।