শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৩৪ অপরাহ্ন
প্রধান সংবাদ :

আরও প্রকট হচ্ছে ডলার সংকট

সাউথ বেঙ্গল নিউজ ডেস্ক
  • প্রকাশিতঃ বৃহস্পতিবার, ২৫ আগস্ট, ২০২২

ব্যাংকগুলোতে ডলারের সংকট আরও প্রকট হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে আন্তঃব্যাংকে ডলারের দাম বেঁধে দেওয়া হলেও ওই দামে কোনো ব্যাংক ডলার বিক্রি করছে না। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক শুধু বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে জরুরি প্রয়োজনে ওই দামে ডলার বিক্রি করছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ডলার কেনাবেচার যে দর ঘোষণা করছে সেই দরের সঙ্গেও বাস্তবতার কোনো মিল নেই। ঘোষিত দরের চেয়ে ব্যাংকগুলো অনেক বেশি দামে ডলার কেনাবেচা করছে। ফলে আমদানির জন্য ডলারের দাম ৯৫ টাকা ৫ পয়সার দরটি শুধু কাগজে-কলমেই থেকে যাচ্ছে।

এদিকে ব্যাংকে চাহিদা অনুযায়ী ডলার পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে প্রতিদিনই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ডলারের জোগান দিতে হচ্ছে। মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৯৫ টাকা দরে ৭ কোটি ডলার রিজার্ভ থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে বিক্রি করেছে। প্রায় প্রতিদিনই ৫ থেকে ১১ কোটি ডলার কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিক্রি করছে। যে কারণে রিজার্ভের পরিমাণও কমে যাচ্ছে।

সূত্র জানায়, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউজ থেকে রেমিট্যান্সের ডলার কিনছে ১১০ টাকা থেকে ১১০ টাকা ৫০ পয়সা দরে। আমদানির জন্য করপোরেট সেলের আওতায় অন্য ব্যাংকের কাছে বিক্রি করছে ১১১ টাকা থেকে ১১২ টাকায়। ওই দামে ডলার কিনে বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তাদের আমদানি করতে হচ্ছে। ফলে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। পণ্যের দামও বাড়ছে। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, ইতালি, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এসব অঞ্চলে সরকারি ব্যাংকগুলোর যেসব এক্সচেঞ্জ হাউজ রয়েছে তারা ওই দামে ডলার কিনছে। ফলে প্রবাসীরাও বেশি দাম পাচ্ছেন। এতে করে অনেক প্রবাসী ডলারের দাম আরও বাড়িয়ে বিক্রি করতে চান। তবে ব্যাংকগুলো বাড়াতে চাচ্ছে না।

এদিকে প্রতিদিন ব্যাংকগুলো বৈদেশিক মুদ্রা কেনাবেচার জন্য বিভিন্ন খাতের দর আগাম ঘোষণা করে। এই ঘোষণা ব্যাংকের প্রতিটি বৈদেশিক বাণিজ্য শাখায় প্রদর্শন করতে হয়। একই সঙ্গে তা বাংলাদেশ ব্যাংকেও পাঠাতে হয়। ঘোষিত দরে রেমিট্যান্সের ডলার কেনার কথা ৯৪ টাকা ৫ পয়সার মধ্যে। কিন্তু দেশের ভেতরে এই দরে কিনলেও বিদেশে বেশি দামে কেনা হচ্ছে।

আন্তঃব্যাংকে ডলারের দাম বেঁধে দেওয়া আছে ৯৫ টাকা। কিন্তু আন্তঃব্যাংকে এই দামে কোনো ব্যাংক ডলার বেচাকেনা করে না। ফলে আন্তঃব্যাংক মুদ্রা বাজার কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। ব্যাংকাররা আন্তঃব্যাংক মুদ্রা বাজার সচল করার দাবি জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকও এ ক্ষেত্রে কিছুই করতে পারছে না। কেননা বাজারে চাহিদা অনুযায়ী ডলার মিলছে না। আন্তঃব্যাংকের বিকল্প হিসাবে গড়ে উঠেছে করপোরেট সেল। এর আওতায় এক ব্যাংক অন্য ব্যাংকের কাছে আগাম এক সপ্তাহ, ১৫ দিন, ৩ মাস, ৬ মাস মেয়াদি ডলার বিক্রি করছে। এতে দাম রাখা হচ্ছে ১১১ থেকে ১১২ টাকা।

ব্যাংকগুলো বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউজ থেকে যেসব ডলার ১১০ থেকে ১১১ টাকায় কিনছে সেগুলো এখানে বিক্রি করছে। এসব ডলার কিনে বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা আমদানি করছেন। ফলে তাদের আমদানি ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। অথচ বাংলাদেশ ব্যাংক আমদানির জন্য প্রতি ডলারের দাম বেঁধে দিয়েছে ৯৫ টাকা ৫ পয়সা।

বলতে গেলে এই দরে আমদানির জন্য ডলার পাওয়া যাচ্ছে না। রপ্তানিকারকরা তাদের ব্যাক টু ব্যাক এলসির চাহিদা মেটানোর পর অবশিষ্ট ডলার থাকলে তা ব্যাংকের কাছে ৯৪ টাকা ৫ পয়সা থেকে ৯৮ টাকা ২০ পয়সা দরে বিক্রি করেন। এছাড়া যেসব রেমিট্যান্সের অর্থ আসে সেগুলো থেকেও কিছু ডলার ওই দরে বিক্রি হয়।

সূত্র জানায়, সরকারি ব্যাংকসহ বেসরকারি ব্যাংকগুলো বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউজ থেকে চড়া দামে ডলার কেনায় এখন প্রবাসীরা কম দামে ডলার ছাড়ছেন না। ফলে ৯৪ টাকার মধ্যে এখন রেমিট্যান্সের ডলার প্রবাহও কমে গেছে।

বাজারে ডলারের সরল প্রবাহ না পেয়ে ব্যাংকগুলো এখন নিজেরাই বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউজমুখী হয়েছে চড়া দামে রেমিট্যান্সের ডলার কিনছে। এই প্রতিযোগিতায় পড়ে সরকারি ব্যাংকগুলো যেমন ডলারের দাম বাড়িয়েছে, তেমনি আন্তর্জাতিক এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোও বাড়িয়ে দিচ্ছে দাম। বিভিন্ন ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন, মানিগ্রাম, স্মল ওয়ার্ল্ড ১০৫ টাকা থেকে ১১০ টাকা দরে রেমিট্যান্সের ডলার কিনে ব্যাংককে জোগান দিচ্ছে। ব্যাংকগুলো আরও এক টাকা বেশি দামে কেনে। এরপর গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করছে আরও এক টাকা বেশি দরে। অর্থাৎ প্রতি ডলারের দাম পড়ছে ১০৭ টাকা থেকে ১১২ টাকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আর নিউজ
© All rights reserved © 2019 southbengalnews
themesba-lates1749691102