শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৪৬ অপরাহ্ন
প্রধান সংবাদ :

বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের হাজারো গাছ কেটে ফেলা হলো মৌলভীবাজারে।

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিতঃ শনিবার, ২৮ জানুয়ারী, ২০২৩

মৌলভীবাজারের মনু নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের হাজারো মূল্যবান গাছ কেটে ফেলা হয়েছে।

দাফতরিক জটিলতাকে সুকৌশলে কাজে লাগিয়েছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। সুযোগ বুঝে দিনের নির্জনতা আর রাতের অন্ধকারে কাটা হয়েছে এসব গাছ। ফলে মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়েছে বাঁধ ও এর দুপাশের গ্রামগুলো।

স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, গাছ রোপণ করা ভূমিগুলো তাদের অধিগ্রহণ করা নয়। আর বন বিভাগ বলছে, গাছ কাটার অনুমতির জন্য কেউই আবেদন করেনি।

ফলে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দেরি করায় সংঘবদ্ধ চক্র দ্রুততার সঙ্গে কেটে নিচ্ছে মূল্যবান গাছগুলো।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ভারতের ত্রিপুরার পাহাড়ি উৎপত্তি স্থল থেকে মনু নদী কুলাউড়ার শরীফপুর ইউনিয়ন দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। কুলাউড়া, রাজনগর ও মৌলভীবাজার সদরের প্রায় ৮৫ কি.মি. পাড়ি দিয়ে কুশিয়ারা নদীতে মিলিত হয়। নদী পাড়ের বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের কষ্ট লাঘবে ২০২০ সালের ২১ জুন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় নদী ভাঙন রোধে প্রকল্পের আওতায় বাঁধ পুনঃনির্মাণ কাজ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ৯৯৯ কোটি টাকা অনুমোদন দেওয়া হয়। বিভিন্ন স্থানে আটটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাছ অপসারণের জন্য ২০২২ সালের ২৭ নভেম্বর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বিভাগীয় বন কর্মকর্তাকে চিঠি দেওয়ার পরও বন বিভাগ কোনো উদ্যোগ নেয়নি।

আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় প্রকাশ্যে প্রায় ৮৫ কি.মি. বাঁধের মূল্যবান আকাশি, বেলজিয়াম, কড়ই, মেহগনি, সেগুনসহ কোটি টাকা মূল্যের গাছ কেটে নিয়েছে। ফলে নদী ভাঙন রোধের এসব গাছগুলো কেটে গ্রামগুলোকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, সম্প্রতি বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন ও বনবিভাগকে অবহিত করা হলে বন বিভাগ ঘটনাস্থলে এসে ১৫/২০টি গাছ জব্দ করলেও রাতের অন্ধকারে সেগুলো উধাও হয়ে যায়। বন বিভাগের অনুমতি না পাওয়ার কারণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানও কাজের অগ্রগতি করতে পারছে না। বর্তমান চলমান কাজ যে গতিতে চলছে তাতে কাজের বাস্তবায়নে অসম্ভব হয়ে পড়ার আশংকা প্রকাশ করছেন স্থানীয়রা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা এ সম্পর্কে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সম্প্রতি দিনে ও রাতে গাছ কাটা হলেও বন বিভাগ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। যারা গাছ কাটছে তারা কি এতোই প্রভাবশালী? বন আইনে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে যে, কেউ গাছ কাটতে চাইলে বাধ্যতামূলক বন বিভাগ থেকে অনুমতি নিতে হবে। তাছাড়া পরিবেশের বিপর্যয় ও আইনে বাঁধা-নিষেধ রয়েছে। এরপরও কীভাবে গাছ কাটা হচ্ছে?

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইউআইজেবি-এর চেয়ারম্যান আকবর আলী বলেন, আমার নাম ভাঙিয়ে কেউ গাছ কাটলে সেটা আমি কি করে জানবো? চলতি মাসের ২৪ তারিখে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বাঁধের ওপর গাছ অপসারণের জন্য লিখিত দরখাস্ত দিয়েছি। তবে গাছ না কাটায় আমাদের কাজ ব্যাহত হচ্ছে।

সিলেট বন বিভাগের আওতাধীন মৌলভীবাজার রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা চম্পালাল রায় বলেন, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান গাছ কাটতে হলে অবশ্যই বন আইন অনুযায়ী অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক। আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে কাটা গাছগুলো জব্দ করি এবং সেগুলো আমাদের বন অফিসে নিয়ে আসি। যারা গাছ কেটেছে তাদেরও বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাবেদ ইকবাল বলেন, নদীর দুই পাড়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধের ভূমি অধিগ্রহণ (মালিকানা) না থাকায় গাছ কাটা চক্রের বিরুদ্ধে কিছু করা সম্ভব হচ্ছে না। ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করে আমাদের মনু নদীর বাঁধে গাছ মালিকদের বন বিভাগ থেকে গাছ কাটার অনুমতি নিয়ে কাটার জন্য বলেছি।

তিনি আরও বলেন, তাছাড়া আমরা ইতোপূর্বে সিলেট বনবিভাগকে একটি চিঠি দিয়েছি গাছ অপসারণের জন্য। সরকারের বন আইনের নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই গাছ কাটা চক্রের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আর নিউজ
© All rights reserved © 2019 southbengalnews
themesba-lates1749691102