জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়াতে যোগ দেয়া ৩৬ জনের মধ্যে ১১ জন বরিশাল বিভাগে- পরিবারের দাবী তারা কিছুই জানেন না
এ বাদে ফরিদপুরে ২ জন ও মাদারীপুরে একজন রয়েছে। বরিশাল বিভাগের মধ্যে পটুয়াখালীতে ৬ জন , বরিশালে ৩ জন, বরগুনায় ১ জন ও ঝালকাঠীতে ১ জন করে রয়েছে। এ ছাড়া ফরিদপুরে ২ জন ও মাদারীপুরে ১ জন রয়েছে।এরা সবাই ২০২১ থেকে , সাম্প্রতিক সময়েও ঘর ছেড়েছে। ঘর ছাড়া এসব তরুনের সবার বয়স ১৯-৪৩ এর মধ্যে। এরা অধিকাংশ সাইবার মাধ্যমে আলাদা এ্যাপস ব্যবহার করে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করতো। প্রায় প্রত্যেকে নিখোজ হওয়া তরুনদের অভিভাবকেররা আগে কিছুই আচ করতেন পারেন নি বলে জানিয়েছেন, র্যাব-৮ এর সূত্র।।
রবিবার (৫ জানুয়ারি) এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন র্যাব-৮ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাহমুদুল হাসান।
তিনি বলেন, জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার কথিত সামরিক শাখার প্রধান মাসুকুর রহমান ওরফে রনবীকে গ্রেফতারের পর তার মোবাইলে অস্ত্র প্রশিক্ষণের কিছু ভিডিও পাওয়া গেছে। এরমধ্যের ৩৬ জঙ্গির নাম-পরিচয় পায় র্যাব। সেই ৩৬ জনের মধ্যে ১১ জনের বাড়ি বরিশাল বিভাগে, বাকী তিনজনের ২ জন ফরিদপুরে ও একজনের বাড়ী মাদারীপুরে।
এই কর্মকর্তা বলেন, এ ছাড়াও মোট ২৪ জঙ্গীর তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এদের অভিভাবকেরা আমাদের জানিয়েছেন তারা বিন্দু মাত্র আচ করতে পারেন নি। তবে এদের মধ্যে পরিবারের সঠিক দিক নির্দেশনার যে অসঙ্গতি ছিল সেটি আমরা লক্ষ্য করেছি। তবে এসব পরিবারের নাম বের না হওয়াই সমীচীন-তাতে হয়তো তারা আরো সাফার করবে।
কর্নেল মাহামুদুল হাসান বলেন, শনাক্ত হওয়া জঙ্গীদের একটি বড় অংশের বাড়ি বরিশাল বিভাগে হলেও এই অঞ্চলে জঙ্গী হামলার পরিকল্পনার কোন গোয়েন্দা তথ্য আমাদের কাছে নেই। আর শনাক্ত যে কয়জন বরিশাল অঞ্চলের জঙ্গী তাদের বরিশাল থেকেই যুক্ত করেছে এমন নয়, তাদেরকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সংগ্রহ করেছে সংগঠনটি।
তিনি জানান এসব জঙ্গীদের যারা পেছনে থেকে নেটওয়ার্ক চালান তাদের বিষয়ে খোজ খবর নিচ্ছে র্যাব। এরা অনেকেই অত্নগোপন করেছে।
এদিকে র্যাবের একটি সূত্র জানায় জঙ্গীদের একটি অংশ ভোলার দুর্গম চরাঞ্চলে গিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছে। বিশেষ করে মনপুরা ও চরকুকরি মুকরি সহ বেশ কয়েকটি চরে এদের তৎপরতা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি রয়েছে। র্যাব সূত্রটি জানায় নিখোজ হওয়া তরুনদের মধ্যে মাদ্রাসা শিক্ষার সাথে, সাধারণ শিক্ষায় যুক্তরা রয়েছে। এ ছাড়া কেউ ব্যবসায়ী, কেউ শিক্ষার্থী, কেউ চাকুরীজীবী এমনকি কৃষি গবেষণায় জড়িত একজন এর সাথে জড়িয়ে গেছেন। এই নাম প্রকাশ হওয়ার মধ্যে কত জন র্যাবের হাতে আটক হয়েছে তা নিশ্চিত ভাবে বলা সম্ভব নয়।
তিনি বলেন এই বিষয়ে সারাদেশেই অভিযান চলমান রয়েছে। আমরা যাদের পেয়েছি তাদের পরিবারের সাথে কথা বলছি। এমনকি এসব জঙ্গীবাদে যারা উদ্বুদ্ধ হয়েছেন কিন্তু নিখোজ হন নি তাদের প্রতিও আমাদের নজরদারি রয়েছে।
পরিচয় পাওয়া ১১ জন হলেন, হলেন বরিশাল বিভাগের বরিশাল সদর উপজেলার চরবাড়িয়া ইউনিয়নের মহাবাজ এলাকার বাসিন্দা রাক্কী আব্দুস সালাম ওরফে দুমচুক ওরফে রাসেল (২৮), সদর উপজেলার চরমোনাই ইউনিয়নের বুখাইনগর গ্রামের ঝড়ঝড়িয়াতলা এলাকার মো. আরিফুর রহমান ওরফে লাইলেন (২৬), বাকেরগঞ্জ উপজেলার পাদ্রিশীবপুরের ভবানীপুর গ্রামের মো. মাহমুদ ডাকুয়া ওরফে হাকা (২০)।
পটুয়াখালী সদর উপজেলার লাউকাঠি গ্রামের আল আমিন ফকির ওরফে মোস্তাক (১৯), এবং মিরাজ শিকদার ওরফে আশরাফ (২৬), পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার মধ্য গছানি গ্রামের শামীম মিয়া ওরফে ওরফে চামদুর (২৫), একই থানার উত্তর লক্ষীপুর দফিপুর গ্রামের মো.হোসাইন আহমদ ওরফে রেকমি (২১), মহিপুর থানাধিন মহিপুর গ্রামের ওবায়দুল্লাহ সাকিব ওরফে শান্ত (২০) এবং মির্জাগঞ্জ থানাধিন সুবিধখালী গ্রামের জুয়েল ওরফে মাহমুদ (২৭)।
বরগুনা জেলা সদরের বুরা মজুমদার গ্রামের সোহেল মোল্লা ওরফে সাইফুল্লাহ (২২),
ঝালকাঠী জেলার ,কালি আন্দার গ্রামের মো. হাবিবুর রহমান ওরফে মুরা ,২৩।
এছাড়া ফরিদপুর জেলার মহনপুর গ্রামের মো জাকারিয়া ওরফে ফিরুক ২৬,ও একই জেলার বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের মো. আবু জাফর পিন্টু ওরফে তাহান,৪৩ ও মাদারীপুর জেলার কালিকাপুর গ্রামের মো. ইয়াছিন ওরফে আরফি ,২১
পরিবারের বক্তব্য
নিখোজ হওয়া বরিশালের মো. মাহামুদ ডাকুয়া ওরফে হাকা ,২০ এর ভাই রাসেল ডাকুয়া জানান, তাদের নিউ মার্কেটে রাসেল বুক ডিপো নামে একটি নতুন বই এর দোকান আছে। তারা তিন ভাই বই ও প্রিন্টিং ব্যাবসার সাথে জড়িত। মাহামুদ দোকানে বসেই বিভিন্ন কম্পিউটারের কাজ করতো। বিশেষ করে বই এর প্রচ্ছদ, কভার, কম্পোজের কাজ করতো।
রাসেল জানান ‘ আমার ভাই যে এ ধরনের কাজে যুক্ত হয়েছে তা ঘূর্ণক্ষরে আমরা জানতে পারিনি। যেদিন সে গেছে সেই দিনও সে আমার সাথে দুপুরে ভাত খেয়েছে। বিকেলে আমি মিরপুরে যে একটি দোকান রেখেছি সেখানে তার যাওয়ার কথা ছিল। গত ২০২১ সালের ১৮ মার্চ থেকে সে নিখোজ রয়েছে। নিখোজের পর থেকে থানায় ডাইরী করা থেকে শুরু করে, র্যাব কে জানানো ছাড়া ৫ হাজার পোস্টার করে বিভিন্ন জায়গায় টানিয়েছি। এমন কি ভাইকে পাওয়া গেছে এরকম ফোন করে গোয়ালন্দ থেকে প্রতারকরা আমার কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা নিয়েছে।
তিনি জানান নিখোজ হবার পর থেকে ভাই এর সাথে তার কোন যোগ নেই । ভাই তার মোবাইল দুই টাও তার কাছে রেখে গেছে। আমি ভাই এর খোজ নিতে র্যাব হেড কোয়াটারেও গিয়েছিলাম কিন্তু এখনও খোজ পাইনি।
রাসেল জানান ’ আমার ভাই পিলখানা রোডে আমার সাথেই থাকতো কোন দিন কোন রকম ব্যাতিক্রম দেখিনি। কিন্তু গত রোজায় সে গাজীপুরে এহতেকাফে গিয়েছিল, আমরা ধারনা সেখান থেকেই তার সাথে এদের কোন যোগ সূত্র হতে পারে।
রাসেল জানান, তাদের বাড়ি বরিশালের পাদ্রী শিবপুর হলেও তার ভাই ঢাকায় থেকে কম্পিউটারের কাজ করতো। এ ছাড়া একটি কলেজেও সে ডিগ্রী পড়তো।
এদিকে র্যাবের এক অধিনায়ক মো. মাহামুদুল হাসান জানান তারা পরিবার গুলোর সাথে কথা বলেছেন। সেখানে মনে হয়েছে পরিবারের কেউ তাদের এই বিষয়টি জানতো না। তবে পরিবারের সন্তানদের গঠনে তাদের ভূমিকার অভাব রয়েছে।