রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:৩৭ অপরাহ্ন
প্রধান সংবাদ :

চাকরির প্রলোভনে কন্যাসন্তানের জননীকে ভারতে পাচার।

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিতঃ শনিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩

রাজধানীর ডেমরার মালা মার্কেট এলাকা থেকে টুম্পা আক্তার রূপা ওরফে ইভা নামের এক কন্যাসন্তানের জননী মানবপাচারকারী চক্রের মাধ্যমে ভারতে পাচার হওয়ার পর খুন হয়েছেন।

এ ঘটনায় ওই তরুণীর বাবা ডেমরা থানায় গতকাল (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাতে ৯ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ২৫-৩০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।

আসামিরা হলেন— পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া থানার সরদারপাড়া গ্রামের আলমগীর মৃধার মেয়ে বৃষ্টি (২৬), তার মা কুলসুম বেগম (৪৫), ভাই আল আমিন (১৯), যশোরের অভয়নগর থানার কাশেম শেখের ছেলে নবাব (৩২), একই থানা এলাকার দোমরা, ছিদ্ধিপাশা গ্রামের ফজর বিশ্বাসের ছেলে জুয়েল বিশ্বাস (৩০), নড়াইলের কালিয়া থানার বিষ্ণপুর গ্রামের ছাকির বিশ্বাসের ছেলে আলী হোসেন (২০), একই থানা এলাকার চাঁদপুর গ্রামের মহাসিন শেখ (৫৪), তার ছেলে মো. নয়ন শেখ (২৭) এবং লেংরা রমজান।

বরিশালের বানারীপাড়া থানার কচুয়া বাইশারী গ্রামের রহিম মিয়ার মেয়ে ইভা ডেমরার নরাইবাগ মালা মার্কেট সংলগ্ন সিরাজ মোল্লার ভাড়াটিয়া ছিলেন।

ইভার বাবা জানান, তিন বছর আগে ইভার বিয়ে হয়। এক বছর পর তার এক কন্যা সন্তান জন্ম হয়। মেয়ে হওয়ায় ব্যাপারটি স্বামী ভালোভাবে নেয়নি। এ ছাড়া স্বামী মাদকাসক্তও। এ নিয়ে বিবাদের একপর্যায়ে স্বামীর সঙ্গে ইভার দূরত্ব তৈরি হয়। পরে ইভা মেয়েকে নিয়ে স্বামীর ঘর ছেড়ে তার ফুফুর বাড়িতে গিয়ে থাকতে শুরু করেন। সেখানে ইভার বাবা মাঝে মাঝে খাবার খরচ দিতেন। কিন্তু অভাবের কারণে মানবপাচারকারী চক্রের চাকরির প্রলোভন পেয়ে মেয়েকে ফুফুর বাড়িতে রেখে বের হয়ে যান ইভা।

ইভার পারিবারিক ও ডেমরা থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বিদেশে চাকরির প্রলোভন পেয়ে ইভা ২০২১ সালের ২০ মে ঘর থেকে বের হয়ে যান। এর পরে ইভাকে খুলনায় আলমগীর মৃধার বাড়িতে রাখা হয়। পরবর্তীতে দেশি-বিদেশি মানবপাচারকারী চক্রের মাধ্যমে যশোরের বেনাপোল সিমান্ত এলাকা দিয়ে ইভাকে প্রথমে ভারতের মুম্বাই শহরে পাচার করে আসামি আল আমিনের বাসায় রাখা হয়। ওখানে ইভার সঙ্গে আরও কয়েকজন মেয়ে রেখে অনৈতিক কাজ করিয়ে টাকা রোজগার করতো বৃষ্টি, নবাব ও আলী হোসেন। মুম্বাইয়ে রেখেই প্রথমে অভিযুক্তরা ইভার নামে ভারতীয় জাতীয় পরিচয়পত্র ও আধার কার্ড তৈরি করে।

এদিকে গত ২৬ জানুয়ারি ভারতের গুজরাট পুলিশ ইভার বাবাকে মোবাইল ফোনে জানায়, তার মেয়ের লাশ গুজরাটের বারুচ এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।

বর্তমানে লাশ গুজরাটে থাকলেও বাংলাদেশে আনার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছেন ডেমরা থানার পরিদর্শক (অপারেশন) শুব্রত কুমার পোদ্দার।

আরও জানা গেছে, ইভা ভারতে যাওয়ার পরই তাকে অবরুদ্ধ রেখে নানা নির্যাতন চালানো হয়। পাচার হওয়ার ১৮ দিন পরে মোবাইল ফোনে ইভা তার বাবাকে জানান, আমাকে আর খোঁজাখুঁজি করোনা, আমি বিদেশে চলে এসেছি। পরবর্তীতে মাসে মাসে বিকাশের মাধ্যমে ইভার বাবার কাছে কয়েক দফায় টাকা পাঠিয়েছে আসামিরা। তাছাড়া বিভিন্ন ইমো নম্বর থেকে প্রায়ই ইভা কথা বলতেন বাবার সঙ্গে।

এদিকে ইভার সঙ্গে থাকা আরেকটি মেয়ে ইভার বাবাকে ফোন করে জানায়, ভারতে থাকা অবস্থায় বাংলাদেশে ফেরত আসতে চাইলে আসামি আলী হোসেনের সঙ্গে ঝগড়া হয় ইভার। এক পর্যায়ে আলী হোসেন ইভাকে ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যা করে।

ইভার সঙ্গে থাকা অন্য একটি মেয়েকেও হত্যা করা হয়েছিল- যার ভিডিও ইভা তার মোবাইলে ধারণ করেছিল বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছেন ডেমরা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. ফারুক মোল্লা।

এ বিষয়ে ডেমরা থানার ওসি মো. শফিকুর রহমান বলেন, ভারতে ইভার খুনের ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। যথারীতি তদন্ত শুরু করা হয়েছে। আসামিরা পলাতক রয়েছে। তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আর নিউজ
© All rights reserved © 2019 southbengalnews
themesba-lates1749691102