রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৫০ অপরাহ্ন
প্রধান সংবাদ :

রাসেলের হত্যাকারি আ.লীগ নেতার ফাঁসি দাবি।

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিতঃ শনিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩

আধিপত্য নিয়ন্ত্রণ, নদী এবং মাছঘাটকে কেন্দ্র করে কিশোর মো. রাসেল (১৪) হত্যাকাণ্ডের তিন দিন পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলেন লক্ষ্মীপুর পুলিশ সুপার মো. মাহফুজ্জামান আশরাফ।

এসপিকে সামনে পেয়ে রাসেলের বাবা মনির হোসেন ভুট্টু ও মা ফাতেমা বেগম তাদের ছেলের হত্যাকারী আওয়ামী লীগ নেতা শাহজালাল রাহুল ও তার সহযোগীদের বিচারের দাবি জানান।

এ দাবি জানানোর সময় নিহত রাসেলের বাবা মনির হোসেন বিলাপ করছিলেন। আর ছেলের পরনের জামা গায়ে দিয়ে হাউমাউ করে কাঁদছিলেন মা ফাতেমা বেগম।

এ সময় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।

পুলিশ সুপার মো. মাহফুজ্জামান আশরাফ শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১ টার দিকে দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নের চরকাচিয়া গ্রামের সেই ‘বির্তকিত’ মাছঘাটে যান।

যেটি রাহুল ঘাট হিসেবে পরিচিত। ওই ঘাটে রাহুলের একটি মাছের আড়ৎ রয়েছে, সেই আড়তের সামনেই খুন হয় রাসেল।

এসপির সঙ্গে এ সময় আরও উপস্থিত ছিরেন রায়পুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ মোহাম্মদ শেখ, রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিপন বড়ুয়া, পরিদর্শক হাসান জাহাঙ্গীরসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকতারা।

পুলিশের এসব কর্মকর্তাদের সামনে পেয়ে রাসেলের মা বলেন, আমার ছেলে রাসেলের হত্যাকারীদের বিচার চাই। কোনো খুনি যাতে আইনের ফাঁক ফোঁকর দিয়ে বের হয়ে যেতে না পারে।

এ সময় রাসেলের মাকে ন্যায় বিচারের আশ্বাস দেন এসপি কামরুজ্জামান আশরাফ।

একই দাবি জানিয়ে রাসেলের বড় বোন জান্নাতুল ফেরদৌস সুইটি বলেন, হত্যাকারী শাহজালাল রাহুল আগে থেকেই এলাকায় বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল। তার নামে যে ঘাট রয়েছে সেখানে তিনি রিসোর্ট তৈরি করেছেন। রিসোর্টে মাদক ও জুয়ার আসরসহ অসামাজিক কার্যকলাপ চলে। প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিত না। তাই তিনি বেপরোয়া হয়ে গেছেন। আগেই যদি প্রশাসন ব্যবস্থা নিত, তাহলে আমার ভাইকে খুন হতে হতো না।

রাসেল হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিতে গিয়ে প্রত্যক্ষদর্শীরা পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ নেতা শাহজালাল রাহুল মেঘনা নদীর সংযোগ খাল পাড়ে একটি মাছঘাট বসিয়েছেন। গত ২ থেকে ৩ বছর থেকে ঘাটটি তার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ঘাটের নাম দিয়ে তিনি নদীর জেলেদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করেন। এছাড়া ঘাটের পাশে খালে মাছ ট্রলার রাখতে হলে তাকে চাঁদা দিতে হয়। চাঁদা না দিলে ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে মারধর বিভিন্ন হয়রানি করান তিনি।

নিহত রাসেলের বড় চাচা মো. বাবুল জানান, আমার মেয়ের জামাই রাহুল ঘাটের পাশে খালে মাছ ধরার ট্রলার রাখত। মাছগুলো রামগতির দিকে বিক্রি করত সে। কিন্তু শাহজালাল রাহুল তাকে চাপ দিতো মাছগুলো তার ঘাটে বিক্রি করতে। এছাড়া ঘাটে ট্রলার রাখার জন্য ১০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে রাহুল। এনিয়েও বিরোধ দেখা দেয়। ঘটনার দিন রাহুলের ভাড়াটিয়া ফারুকের সাথে এ নিয়ে আমার সঙ্গে কথা-কাটাকাটি হয়। বিষয়টি সে রাহুলকে জানালে সে অস্ত্রসহ ভাড়াটে লোকজন এনে রাহুল ঘাটে হামলা চালায়। খবর পেয়ে আমি ভাই মনির ও মনিরের ছেলে রাসেল ঘাটে যাই। এসময় রাসেলের গলা চেপে ধরে রাহুল এবং রাকিব নামে রাহুলের ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী রাসেলের পেটে ছুড়ি মারে। এতে রাসেলের মৃত্যু হয়।

এদিকে স্থানীয়দের সঙ্গে পুলিশের কথোপকথনে উঠে আসে মাছঘাট ও চর কেন্দ্রিক রাহুলের অপকর্মের চিত্র। দীর্ঘদিন থেকে এলাকায় একক আধিপত্য বিস্তার করে আসছিলেন শাহজালাল রাহুল।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে পুলিশ সুপার মাহফুজ্জামান আশরাফ সাংবাদিকদের বলেন, দুই পক্ষের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষে কিশোর রাসেল নিহত হয়েছে। অভিযুক্ত রাহুলসহ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ৫ জনকে আটক করা হয়েছে। তারা সবাই এখন কারাগারে। আদালতে তাদের ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, এ মামলার তদন্ত কার্যক্রম প্রায় শেষ পর্যায়ে। অচিরেই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেওয়া হবে। রাহুলের বিরুদ্ধে পূর্বেও হত্যা, ধর্ষণ, চাঁদাবাজিসহ অনেকগুলো মামলা রয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত বুধবার সকালে জেলার রায়পুর উপজেলার দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নের চরকাচিয়া গ্রামের রাহুলঘাটে দুপক্ষের লোকজনের সংঘর্ষে ১৪ বছরের কিশোর রাসেল নিহত হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আর নিউজ
© All rights reserved © 2019 southbengalnews
themesba-lates1749691102