জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তমঞ্চে অনুষ্ঠান চলাকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তাসহ আমন্ত্রিত এক অতিথিকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে।
একই ঘটনায় কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সোহেল পারভেজ ও শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রাশেদুল ইসলাম শাফিনকে হেনস্তার অভিযোগ উঠেছে।
শুক্রবার (১০ মার্চ) রাত ১১ টায় সেলিম আল দীন মুক্তমঞ্চে ৩২ ব্যাচের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান চলাকালে এ ঘটনা ঘটে।
অভিযুক্তরা হলেন – শাখা ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক বাবুল হোসেন রনি, উপ-বিজ্ঞান বিষয়ক সম্পাদক উৎস দত্ত, উপ-ছাত্রবৃত্তি বিষয়ক সম্পাদক অরবিন্দ ভৌমিক, সহ-সভাপতি কে এম রহমান জাকারিয়া, উপ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক সবুজ রায়, উপ-দপ্তর সম্পাদক তানজীম আহমেদ নিরব, সহ-সম্পাদক তারিকুল ইসলাম তারেক ও বাংলা বিভাগের ৪৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী আকাশ তুহিনসহ আরও ২০/২৫ জন।
অভিযুক্তরা সবাই বিশ্বাবিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ছাত্রলীগ কর্মী ও শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটনের অনুসারী।
মঞ্চে উঠতে না দেওয়াকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে প্রত্যক্ষদর্শীরা।
ভুক্তভোগীদের সূত্রে জানা যায়, ৩২ ব্যাচের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে মঞ্চে সোলস ব্যান্ডের গান পরিবেশনের সময় ছাত্রলীগ কর্মীরা মঞ্চে ওঠার চেষ্টা করে। এসময় আয়োজকরা অনুষ্ঠানের শৃঙ্খলার স্বার্থে তাদের উঠতে বাধা দেয়৷ এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তারা পার্থ বড়ুয়ার সঙ্গে আসা লিটন নামের আমন্ত্রিত এক অতিথিকে মারধর শুরু করে৷
এসময় প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহিন তাদের থামাতে গেলে তাকেও মারধর করে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এক পর্যায়ে সেখানে উপস্থিত শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য ও যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সোহেল পারভেজ এবং জাবি ছাত্রলীগের আরেক সাবেক সভাপতি রাশেদুল ইসলাম শাফিনকেও হেনস্তা করা হয়।
মারধরের শিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহিন বলেন, ‘আমি দেখতে পেলাম অনেকগুলো ছেলে একসাথে লিটনকে মাটিতে ফেলে মারধর করছে। এসময় আমি পরিচয় দিয়ে তাদের থামানোর চেষ্টা করলে আমার উপরও চড়াও হয়ে মারধর শুরু করে তারা। ’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৩২ ব্যাচের এক প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থী বলেন, ‘অতিথিকে মারধরের সময় সোহেল পারভেজ ও শাফিন ছেলেদের আটকানোর চেষ্টা করলে তাদেরকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। এতে সোহেল হাতে ব্যথা পায়। এসময় প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহিনকে বেধড়ক মারধর করেছে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। ’
হেনস্থার শিকার যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সোহেল পারভেজ বলেন, ‘মারধরের সময় ছেলেদেরকে থামাতে গেলে আমার গায়ে ধাক্কা লাগে। পরিচয় দেয়া সত্ত্বেও তাদেরকে থামানো যাচ্ছিল না। পরে আমরা নিজেদের মধ্যে মিটমাট করে নিয়েছি। ’
এদিকে মারামারির ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে অভিযুক্ত উৎস দত্ত নিজে যুক্ত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করের।
তিনি বলেন, ‘আমি তখন মুক্তমঞ্চের পাশে ছিলাম। এরকম একটা ঘটনা ঘটেছে আমি শোনার পর মুক্তমঞ্চে গিয়ে দেখি আমার হলের জুনিয়ররা সেখানে ঝামেলা করছে। তাই আমি আমার দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে হলের সিনিয়র হিসেবে সেখান থেকে জুনিয়রদের পাঠিয়ে দিই। আমি এই মারামারিতে সম্পৃক্ত নই। কেউ যদি বলে থাকে আমি সম্পৃক্ত তবে সেটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে বলেছে। ’
আরেক অভিযুক্ত আকাশ তুহিন বলেন, ‘আমি তো উপস্থিত ছিলাম মুক্তমঞ্চে। কি ঘটেছে ভেতরের কাহিনী বিস্তারিত জানি না। দেখলাম ঝামেলা হচ্ছে। এটা ভুল তথ্য , আমি দর্শকদের সারিতে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এ ঘটনায় আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। ’
অভিযুক্ত বাবুল হোসেন রনি, সবুজ রায়ের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটন বলেন, ‘আমি তখন ক্যাম্পাসে ছিলাম না, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ভাইয়ের বিয়ের দাওয়াতে গিয়েছিলাম। এমন অপ্রীতিকর ঘটনা সত্যিই দুঃখজনক। এরকম কিছু ঘটে থাকলে অবশ্যই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ.স.ম ফিরোজ-উল হাসান বলেন, ‘ওই সময় আমি ক্যাম্পাসের বাইরে ছিলাম, তবে মোবাইল ফোনে ঘটনাটি সংক্ষেপে জেনেছি। বিস্তারিত জেনে ব্যবস্থা নেব। ’